শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ রাজধানীতে দিনে দুপুরে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ও যৌন উত্তেজক ওষুধ। বিক্রির সুবিধার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে ওষুধের বিভিন্ন সাংকেতিক নাম। অতিলাভের আশায় বিক্রেতারা একেকটি ট্যাবলেট পাঁচ থেকে ১০ টাকায় কিনে বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। অনুমোদনহীন এসব ওষুধে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতারা।
ডেইলি বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বড় বড় ফার্মেসি থেকে শুরু করে ফুটপাতসহ সব জায়গাতেই অবাধেই বিক্রি হচ্ছে যৌন উত্তেজক ও নেশা জাতীয় ওষুধ। শুধু রাজধানীতেই নয়, নগরীর অলি গলিতেও বিক্রি হচ্ছে এসব ওষুধ। যা একদিকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীতে ছোট বড় প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে যৌন উত্তেজক ও নিষিদ্ধ এসব ওষুধ। তবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে ইয়াবার আদলে থাকা ওষুধগুলো বিক্রি হচ্ছে কিছুটা গোপনে। আর যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি হচ্ছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। যার বেশির ভাগই অনুমোদনহীন ও নিম্নমানের।
নিষিদ্ধ ও যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রেতা মনির হোসেন জানান, এগুলো আমরা মিটফোর্ডের পাইকারি বাজার থেকে এনে থাকি। এগুলোর কার্যকারিতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই এগুলো আমরা শুধু বিক্রি করি। কি কি কাজে লাগে জানি না।
ফুটপাতের অপর এক ওষুধ বিক্রেতা বলেন, প্রতিদিন অনেক কাস্টমার এসে কিনে নিয়ে যায় এটাই জানি। তবে অনেক ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেছে এটি যৌন উত্তেজনা বাড়ায়।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, দেশের বাজারে প্রায় দুইশ’ ধরনের যৌন উত্তেজক ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। যার কয়েকটি ছাড়া সবগুলোই অনুমোদনহীন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি হয়ে এগুলো সরাসরি চলে আসছে ঢাকার ওষুধের বড় পাইকারি বাজার মিটফোর্ডে। আর এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে খুচরা বাজারে।
ইয়াবার আদলে ব্যবহার হওয়া এমন কিছু ওষুধ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে ছোট বড় কয়েকজন ফার্মেসির বিক্রেতারা জানান, সারাদিন তেমন ওষুধ বিক্রি হয় না। যা হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই নিষিদ্ধ ও যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করতে বাধ্য হই আমরা।
তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে, অনুমোদনহীন সব ধরনের ওষুধের কেনাবেচা বন্ধে তদারকি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে তারা। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে বলেও জানায় অধিদফতর।
ডেইলি বাংলাদেশিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, এসব ওষুধ যেন বিক্রি করতে না পারে সেটার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দিন দিন অভিযানের ফল ভালো সুফল বয়ে আনবে বলেও জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (চর্ম ও যৌনরোগ) শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, এটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আপনারা দেখবেন শতকরা ৯০ ভাগ লোক এগুলো প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করছে। এটি স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকারক এবং মানসিক বিকৃতির জন্যও দায়ী। যারা এসব ওষুধ ব্যবহার করে এরা স্বাভাবিক থাকতে পারে না।
এ নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, অতিরিক্ত যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবনের ফলে ব্যক্তির মানসিক সমস্যা ছাড়াও অপরাধ করার প্রবণতা বাড়াতে সহায়তা করে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের ওষুধ সেবন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আজিজুর রহমান বলেন, এগুলো যারা ব্যবহার করে তাদের মানসিক সমস্যা তো অবশ্যই থাকবে। সে হয়ে যাবে অস্থির। যদি যৌন উত্তেজক ওষুধ ব্যবহার করে তাহলে তার মনের মধ্য সবসময় যৌন চাহিদা রয়ে যাবে। সেটা যদি ব্যবহার না করে তাহলে সে স্বাভাবিক থাকতে পারবে না।
এছাড়াও সামাজিক অবক্ষয় রোধে এ ধরনের ওষুধের অবাধ বিক্রি বন্ধের তাগিদ দেয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
Leave a Reply